শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

আফগানিস্তানে নারী শিক্ষা

ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ   |   বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ ২০২৪

আফগানিস্তানে নারী শিক্ষা

নারী বিদ্বেষের উদাহরণ হিসেবে আফগানিস্তান অনেক উপরের সারির দেশ। সনাতন সমাজ ব্যবস্থা, ধর্মীয় কূপমণ্ডূকতা, কুসংস্কার এবং অন্ধ সনাতনী বিশ্বাসের বেড়াজালে নিপতিত দেশটি কোনকালেই নারী বান্ধব ছিল এমন বলা যাবে না, যদিও সময়ে সময়ে নারীদের ঘরের বাইরে এনে শিক্ষা দানের ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায় । ১৯২০ শতকে বাদশাহ আমানুল্লাহ আফগান সমাজ ও দেশটিতা আধুনিকতার ছোঁয়া দিতে চেষ্টা করেছিলেন । নারী জাগরণের প্রশংসনীয় সুবাতাস তখন বইতে শুরু করেছিল । ১৯২৬ সাল থেকে ১৯২৬ সাল পর্যন্ত বাদশাহ থাকা কালীন সময়ে আমানুল্লাহ পাশ্চাত্যের অনুকরণে শিক্ষা ব্যবস্থ্যা ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করেছিলেন । বহুমাত্রিক প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক সংস্কার সাধনের প্রচেষ্টার সাথে সাথে তিনি শিক্ষা ক্ষেত্রে যুগান্তরই পরিবর্তন আনয়ণ করেন । লয়া জিরগা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাদশাহ আমানুল্লাহ ৮৭২টি সম্প্রদায় বা ট্রাইবের নেতাদের অংশগ্রহণে দেশটিতে প্রথম বারের মত খসড়া গঠনতন্ত্র উপস্থাপন করেন। শরিয়া আইন এবং সরকার প্রণীত আইনের সমন্বয়ে সকল মহলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি শাসনতন্ত্র উপহার দেন। আমির এবং বাদশাহ হিসেবে তিনি জনপ্রিয় ছিলেন। আধুনিকায়নের মূল মন্ত্র হিসেবে তিনি প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থাকে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিকায়ন এবং নারী ক্ষমতায়নকে মূল চালিকা শক্তি হিসেবে বেছে নেন। দেশের সকল প্রদেশে প্রায় চারশতের মত সচল, কলেজ, টেকনিকাল প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান, আরবি শিক্ষার একাডেমী বা দারুল উলুম,জালালাবাদ রশিদিয়া স্কুল,একাডেমী অব বেসিক মেডিক্যাল সাইন্সেস ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম অবস্থায় ভারতীয় শিক্ষকের আধিক্য থাকলেও (আমাদের প্রিয়জন সৈয়দ মুজতবা আলী’র কথা স্মরণ করা যেতে পারে) পরবর্তীতে ফ্রান্স থেকে শিক্ষক নেয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় । বাদশাহ নিজেও সময় সুযোগ পেলেই শ্রেণীকক্ষে গিয়ে পড়াতেন ।
বাদশাহ পত্নী বেগম সূর্য তারজি মেয়েদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে ঘরের রবাইরে এনে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার সপক্ষে জোরালো ভাবে কাজ করেছেন। তার এহেন প্রচেষ্টা আফগানিস্তানের মত সনাতন সমাজ গ্রহণ করেনি যেমন করেনি বাহাই সম্প্রদায়ের সাথে বাদশাহ আমানুল্লাহর সুসম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা । খোস্ত আন্দোলন এবং বিদ্রোহ এ দু’ কারণেই হয়েছিল বলে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়। ১৯২৫ সালে এ বিদ্রোহ দমন করা হলে ও ধর্মান্ধ মানুষের রোষ এবং বিদ্রোহের ভয়াবহতায় বাদশাহ ১৯২৯ সালে স্বেচ্ছায় সিংহাসন পরিত্যাগ করেন।
সমাজ বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণে দেখলে ট্রাইব বিভক্ত সমাজে অভিজাত শাসক শ্রেণী বাদশাহ আমানুল্লাহ শাহ নারীশিক্ষা , নারীদের কর্মসংস্থান এবং শিক্ষা, প্রশিক্ষণের
জন্য বিদেশ পাঠানো এ সব প্রগতিশীল কর্মকাণ্ড মেনে নিতে পারেনি। তবে যে অগ্নিশিখা তিনি প্রজ্বলিত করেছিলেন তার ধারাবাহিকতায় নারী জাগরণের প্রবাহ দীর্ঘদিন চলতে থাকে । ১৯২৮ সালে কোহিস্থান কেন্দ্রিক হাবিবুল্লাহ খালখানির নেতৃত্বে কাবুল অবরোধ করলে আমানুল্লাহ দেশ ছেড়ে ভারত এবং পরবর্তীতে ইউরোপে স্বেচ্ছা নির্বাসনে চলে যান । একই সাথে ঘটে নারী জাগরণের একটি অধ্যায়ের করুণ পরিণতি। ১৯৭৮ সালে কম্যুনিস্ট শাসনকে মদদ দিতে ১৯৭৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান আক্রমণ করে। মুজাহেদিন বাহিনী ১০ বছর যাবত যুদ্ধ করে ১৯৮৯ সালে সোভিয়েতদের হটাতে সক্ষম হয় তবে নিজেদের মধ্যে বিবাদে জড়িয়ে পরে। তালিবানরা দেশটির বেশীর ভাগ দখল করে নেয় । এই সময়টি ছিল নারী স্বাধীনতার ক্ষেত্রে সবচাইতে খারাপ সময়। তাদের প্রথম দফা শাসন (১৯৯৬ -২০০১) এর সমাপ্তি এবং দ্বিতীয় দফা (১৫ই অগাস্ট ২০২১) শাসন শুরুর মধ্যবর্তী সময়টি ছিল নারী শিক্ষা, নারী স্বাধীনতা এবং প্রগতির স্বর্ণময় দুই দশক। এ সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের ভর্তির সংখ্যা ও উপস্থিতির হার ছেলেদের ছাড়িয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে আমার একটি প্রবন্ধে মন্তব্য করেছিলাম যে, “মনে হচ্ছিল, নারী শক্তির এহেন উজ্জীবনে দেশটিকে ও আফগান জাতিকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের পথে ধাবিত করবে দ্রুত গতিতে “। আরও বলেছিলাম, “স্কুল, কলেজ,এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও মহিলা শিক্ষক প্রচুর সংখ্যায় নিয়োগ লাভ করেন। সরকারি চাকরী, ব্যাংক, বীমা প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি সেবামুল্ক সংগঠন, বিদেশী দূতাবাস, অনুবাদক হিসেবে কাজ, নার্স, ডাক্তার ইত্যাদি রকমারি পেশা নারীদের ঘরের বাইরে নিয়ে যেতে সহায়ক হয়” (দেখুন, আশরাফ উদ্দিন আহমেদ, “থমকে গেল নারী প্রগতি,” সাপ্তাহিক বাংলাদেশ ২১ অক্টোবর, ২০২১)। আফগানিস্তান থেকে আমেরিকান সৈন্য প্রত্যাহারে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশটি নারী সমাজ। যে সময়ে কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০,০০০ ছাত্রের অর্ধেকের বেশী ছিল মেয়ে, সেখানে আজ তাদের প্রবেশাধিকার নেই। তালেবানরা আমেরিকার সাথে চুক্তি ভঙ্গ করে নারীদের শিক্ষার পথ রুদ্ধ করে ফেলেছে। শত বাঁধা বিপত্তি সত্ত্বে ও আমেরিকায় অবস্থানরত আফগান নারীদের চেষ্টায় আফগান নারীরা অনলাইন প্রোগ্রামে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে সৃষ্ট এ রিমোট লার্নিং ব্যবস্থাটি খুবই সঙ্গোপনে পরিচালনা করা হচ্ছে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে । তাছাড়া, সাই রাসেল নামের এক দানশীল মহিলা ইউনিভার্সিটি অব পিপল নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় চালু করেছেন এবং আফগান নারীদের জন্য প্রতি বছর এক হাজার বৃত্তি প্রদান ও শুরু হয়েছে। বিল ও মেলিন্দা গেটস ফউন্ডেশন, ফোর্ড ফাউন্ডেশন, ক্লিনটন ফাউন্ডেশন এবং আরো অনেক সংগঠন এ উদ্যোগে শামিল হতে এগিয়ে এসেছে। তাছাড়া,ইউএনডিপি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আর্থিক সংস্থা বেশ কয়েকটি বৃত্তির ব্যবস্থ্া করেছে যাতে সেন্ট্রাল এশিয়ান দেশগুলোতে আফগান মেয়েরা পড়াশোনা করতে পারে। তবে, কট্টরপন্থী ধর্মান্ধ তালেবান শাসক গোষ্ঠী কড়াকড়ি পর্দা প্রথাসহ বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা চালু করে মেয়েদের চলাফেরার স্বাধীনতা হরণ করায় শিক্ষা নিতে বিদেশ যাওয়া প্রায় অসম্ভব করে রেখেছে । আন্তজাতিক চাপ, বিভিন্ন দেশের সেন্ট্রাল ব্যাংকগুলোতে রক্ষিত আফগান ফান্ড হিমায়িত করে রাখা হলে নারী শিক্ষা, নারী অধিকার এসব ব্যাপারে তালেবান সরকার কিছুটা নমনীয় মনোভাব দেখাচ্ছে তবে তা নেহাতই যৎসামান্য ।


advertisement

Posted ৯:৩৭ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ ২০২৪

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

গল্প : দুই বোন
গল্প : দুই বোন

(6289 বার পঠিত)

স্মরণে যাতনা
স্মরণে যাতনা

(1308 বার পঠিত)

মানব পাচার কেন
মানব পাচার কেন

(1154 বার পঠিত)

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.